ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট: বৃহস্পতিবার ( 24 ফেব্রুয়ারী ) থেকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। রুশ সৈন্যরা উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক দিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে, বড় বড় শহর ও সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যায়।
Global New News Desk-
রুশ হামলার পর কিয়েভে বিপর্যস্ত জনজীবন।ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন
অঞ্চলে তীব্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেইসাথে দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তরের
প্রধান ইউক্রেনীয় শহরগুলির চারপাশে যুদ্ধ চলছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর লিয়াশকোর জানিয়েছেন রাশিয়ার হামলার
কারণে তিন শিশুসহ মোট ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১১৫ জন, যাদের মধ্যে
৩৩ জন শিশু।
রয়টার্সের খবরে জানা গেছে যে আজ স্থানীয় সময় সকালে কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে
দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
কিয়েভের নগর কর্তৃপক্ষের মতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানকার একটি আবাসিক
ভবনে আছড়ে পড়েছে। আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানীর ঝুলিয়ানি বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরিত
হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে রয়টার্স।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স
ও স্পুটনিক জানিয়েছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিঝিয়ায় মেলিটোপল
শহর দখল করেছে। মেলিটোপল হল ইউক্রেনের মূল বন্দর মারিউপোলের কাছে একটি মাঝারি আকারের
শহর। যেখানে অন্তত দেড় লাখ মানুষ বাস করেন।
ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা গিয়েছে যে, তাদের সেনারা
রুশ হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। কিয়েভের একটি সেনা ইউনিট শহরের প্রধান সিটি এভিনিউ
থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
শনিবার ওই ফেসবুক পোস্টে তারা জানায়, কিয়েভের একটি সেনা ঘাঁটিতে রাশিয়ান
সৈন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর দাবি, তারা কৃষ্ণ সাগরের শহর মাইকোলাইভে থেকে রাশিয়ানদের
সফলভাবে সরিয়ে দিয়েছে। সেইসাথে কিয়েভ সেনা ঘাঁটিতে হামলা ঠেকিয়েছে।
এর আগে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাশিয়ান বাহিনী চেষ্টা করছে
রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার
চেষ্টা করবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি টুইটারে নিজের একটি সেলফি ভিডিও
পোস্ট করে বলেছেন যে, "অনলাইনে প্রচুর মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে যে, আমি আমাদের সেনাবাহিনীকে
অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নিচ্ছি।"
"আমি এখানে আছি। আমরা আমাদের অস্ত্র রাখব না। আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে
রক্ষা করব।" বলেন তিনি।
মি. জেলেনস্কিকে ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন প্রস্তাব
করলেও সেটা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে।
মি. জেলেনস্কি এর জবাবে বলেছেন "এখানে লড়াই চলছে। আমার গোলাবারুদ
দরকার, কোথাও সরে যাওয়ার নয়।", সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে খবরটি জানিয়েছে
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হেপি বলেছেন যে যুক্তরাজ্য
এবং আরও ২৫টি দেশি ইউক্রেনকে "মানবিক সহায়তা ও অস্ত্র সহায়তা" দিতে সম্মত
হয়েছে।
রাজধানীতে, মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা
গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের উপর গোলা হামলার শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল
যে শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।
কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা
শহরের আশেপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।
ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট বলেছেন যে কিয়েভ "এই মুহূর্তে
একাধিক দিক থেকে" আক্রমণের শিকার হয়েছে।
ইউক্রেনীয় স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ট্রয়েসচিনা এলাকার
সিএইচপি-৬ পাওয়ার স্টেশনের কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এই হামলার মাধ্যমে পুরো শহরটিকে
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
কিয়েভের পেরেমোহি অ্যাভিনিউতে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন
জ্বলতে দেখা গেছে।
ভাসিলকিভের একটি বিমান ঘাঁটির কাছে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা
করা হচ্ছে রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কিয়েভের উপর হামলা চালানোর জন্য এই ঘাঁটিকে তাদের
কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস রুশ সেনাদের ব্যারাকে ফিরে
যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শান্তিকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিত।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পরপরই তিনি এই মন্তব্য করেন, যেখানে ইউক্রেনে
আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেয় রাশিয়া।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতার
কারণে এই খসড়া প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
নিরাপত্তা পরিষদের এগার সদস্য দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীন,
ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
"জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধাবস্থায়, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। আজ
সেই উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। কিন্তু আমাদের কখনোই হাল ছাড়লে চলবে না। আমাদের শান্তিকে
আরেকটি সুযোগ দিতে হবে," টুইট করেন মি. গুতেরেস।
এর কিছুক্ষণ পরে, তিনি ইউক্রেনে হামলা চালানো রাশিয়ান সেনাদের ব্যারাকে
ফিরে যেতে বলেন।
রাশিয়ায় জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের
সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন যারা খসড়াকে সমর্থন করেননি, একে তিনি "রুশ-বিরোধী"
প্রস্তাব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কিয়েভে লড়াই প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি ইউক্রেনীয়দের সতর্ক করে বলেছেন যে তারা কোন অবস্থায় রাজধানীকে "হারাতে
পারবে না"।
রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের
আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইইউ প্রথমবারের মতো সরাসরি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের
ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এছাড়া অনেক দেশ রাশিয়ার বাণিজ্যিক এয়ারলাইনস এবং ব্যক্তিগত জেট ব্যবহারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে
0 মন্তব্যসমূহ