এটা তো টেবিল চেয়ার না, যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম ! দশ কোটিরও বেশি মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। দেশে এখন প্রায় ২২ ধরনের কাজের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের দরকার হয়







এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার বিরোধিতা কেন নির্বাচন কমিশনের    



এনআইডি কার্যক্রম নিতে চাইলে সংলাপে বসতে হবে : সিইসি



স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এলে এনআইডি সেবায় জটিলতা থাকবে না : আসাদুজ্জামান 



এনআইডি কার্যক্রম নিতে চাইলে সংলাপে বসতে হবে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম তো টেবিল-চেয়ার না, যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম। এজন্য ডায়লগে (সংলাপ) বসতে হবে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। সমপ্রতি সরকার থেকে এনআইডি কার্যক্রম লোকবলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীন হস্তান্তরের জন্য ইসিকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। 

এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছেন, সরকার যথাস্থানেই এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার তালিকা করা। 

সেই তালিকা করতে নির্বাচন কমিশন এ এনআইডি থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন। কাজেই সমন্বয়হীনতার কোনো প্রশ্ন আসে না। সিইসি বলেন, এনআইডি অনুবিভাগ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। কীভাবে নেবে-না নেবে, এ বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা তো টেবিল চেয়ার না, যে উঠিয়ে নিয়ে গেলাম।  








স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এলে এনআইডি সেবায় জটিলতা থাকবে না : আসাদুজ্জামান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বরং এনআইডি সেবা এখন যথাস্থানে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুযায়ী, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। 

কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার কারণ হলো যাতে প্রতিষ্ঠানটি এর ওপর সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে অর্পিত দায়িত্বগুলো প্রভাবমুক্ত হয়ে সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে, যার মধ্যে ‘সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুত অন্যতম। 

ভোটার তালিকা নিয়ে বাংলাদেশে বহুদিন থেকেই বিতর্ক বিরাজমান। অনেকেরই স্মরণ আছে যে বিচারপতি আজিজের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আমলে ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২০ লাখ ‘ভুয়া’ ভোটার থাকার অভিযোগ উঠেছিল, যার মূল কারণ ছিল একই ব্যক্তির একাধিক এলাকায় ভোটার হওয়া। 

বিষয়টি নিয়ে প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে এবং শেষ অবধি এটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরে ড. শামসুল হুদা কমিশনের তত্ত্বাবধানে, দাতাদের সহায়তায় এবং সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ২০০৭ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অধীনে নেয়ার আগে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, কারণ তারা মনে করেন এটি নির্বাচন কমিশনের হাতছাড়া হলে তাদের কার্যক্রমের অসুবিধা হবে।                                   

এদিকে ভোটার তালিকাটি ‘ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমস (আইইএফএস) নামক একটি বিখ্যাত আমেরিকান সংস্থা অডিট করে অভিমত দেয় যে এটি প্রায় নির্ভুল, যার ফলে আমরা সারা পৃথিবীতে 

প্রশংসা কুড়িয়েছি। বস্তুত ছবিযুক্ত এ ভোটার তালিকা আমাদের পুরো জাতির জন্য একটি গর্বের ধনে পরিণত হয়।    এনআইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে নির্বাচন কমিশন তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।


'সরকার কাজ শুরু করে দিয়েছে'

তবে এর মধ্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র আইন সংশোধন করে এর নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায় নেয়ার প্রাথমিক কার্যক্রমও সরকার শুরু করেছে।
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার হয়

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার হয়

প্রক্রিয়াটি কিভাবে হবে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। একই সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কাজ পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে এক চিঠি পাঠিয়ে সরকার তার সিদ্ধান্ত জানিয়েও দিয়েছে।

তবে কমিশন বারবারই সরকারের এ ধরণের উদ্যোগের বিরোধিতা করে এনআইডি তাদের হাতেই রাখাকে যৌক্তিক বলে দাবি করছে।


নির্বাচন কমিশনের আপত্তির কারণ কী ?

কিন্তু সরকারি একটি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে সরকার নিজেদের হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশন আপত্তি করছে কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ নতুন করে করতে গেলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন তারা।

"ভোটার তালিকার উপজাত হিসেবে কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়। আমাদের নির্বাচন কমিশনের লোকদেরই আমরা তৈরি করেছিলাম, নতুন রিক্রুট করিনি । নির্বাচনের বাইরে এটাকে ম্যানেজ করার যে 

দক্ষতা - টেকনিক্যাল ও ম্যানেজারিয়াল - সেটা একদিনে হবে বলে মনে করিনা। যদি না হয় তাহলে উপকারভোগীরা ঝামেলায় পড়বে"।






২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির অংশ হিসাবে প্রথমে ভোটার পরিচয়পত্র তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই পরে ভোটার পরিচয়পত্রের বদলে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়।

বাংলাদেশে এ মূহুর্তে দশ কোটিরও বেশি মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। দেশে এখন প্রায় ২২ ধরনের কাজের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের দরকার হয়।জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, বিতরণ কিংবা সংশোধনের কাজ নির্বাচন কমিশন করছে

কিন্তু এ সেবা সরকার দিতে চাইলে কমিশন তাতে বাধা দিচ্ছে কেন, অথবা বিরোধিতাই বা করছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মি. ইসলাম বলেন, তারা বিরোধিতা করছেন না তবে বোঝাতে চাইছেন যে পরিচয়পত্রের বিশাল কর্মযজ্ঞ যেখানে ঠিক মতো চলছে সেখান থেকে সরিয়ে নতুন করে তৈরিটা বাস্তবসম্মত চিন্তা নয়।

"বিরোধিতা আমরা করছিনা। বাস্তবতা তুলে ধরছি।....এটা ম্যানেজ করতে যে জনবল, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা লাগবে সেটা একদিনে বা অল্প সময়ে তৈরি করা সম্ভব না"।

নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

যদিও নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরি করে আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সেই ডাটাবেজ দরকার হবে- সেক্ষেত্রে দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান কাজটি করলে সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে বলেও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।


সমন্বয়হীনতার কোন সম্ভাবনা নেই, বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তবে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলে সেবা নিয়ে কোন জটিলতা বা নির্বাচন কমিশনের সাথে কোন সমন্বয়হীনতার আশংকা থাকবে না।

"সঙ্গত কারণেই এটা সরকার যথাস্থানে আসার নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ সাধারণত ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেটা তৈরির যত ধরণের সহযোগিতা এখান থেকে পাওয়ার - সেটা তারা পাবেন। কাজেই এ নিয়ে সমন্বয়হীনতার প্রশ্নও আসে না"।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে যাই বলা হোক - নির্বাচন কমিশন বলছে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে সচিব পর্যায়ে আলোচনার সময়েও তারা এনআইডির নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টাই চালাবেন।সুত্র,বিবিসি  
                    

#globalnewnews.com    #globalnewnews.com/bn    #globalnewnewsen     #globalnewnewsbn    #gnn  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ