তালেবানের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে

কাবুল 



তালেবানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ ,সরকারে যারা পদ পেল ,আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফবিআই’র মোস্ট ওয়ান্টেড ‘হাক্কানী’, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে পেলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব , পাঞ্জশের দখলের দাবি তালেবানের , আফগানিস্তানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ  !

 

 

 

  


Global New News Desk    -   

অন্তর্বতী সরকার গঠন তালেবানের । আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ ।ক্ষমতায় আসার তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পর তালেবান এক নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নাম ঘোষণা করেছে। মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। নতুন এই সরকারে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

 

মঙ্গলবার এক ঘোষণার মাধ্যমে এ তথ্য জানান তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।

 

জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। পাশাপাশি তার ডেপুটি হিসেবে কাজ করবেন সশস্ত্র ইসলামি এই গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেরাজউদ্দিন হাক্কানি।

 

মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের উপপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।

 

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে। তাতে ক্ষমতা হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। ২০১৩ সালে মোল্লা ওমরের মৃত্যু হলেও তা দুই বছর গোপন ছিল।

 

 


তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, মন্ত্রীসভায় উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আব্দুল গানি বারাদার।তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।তালেবানের যে ক'জন কর্মকর্তা কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা চালিয়েছে তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

 

মি. মুজাহিদ বলেন, নতুন সরকারের প্রথম কাজগুলোর মধ্যে থাকবে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এবং দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট মোকাবেলা করা।

 

তালেবানের নতুন সরকারের রূপরেখা গঠনে অন্তর্বর্তী মন্ত্রীসভা গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।অন্তর্বর্তী সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন সেরাজুদ্দিন হাক্কানি।তিনি জঙ্গি-দল হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান।গত দু‌'দশকব্যাপী লড়াইয়ে আফগানিস্তানের ভেতরে অনেকগুলো সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক।এটি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসীদের তালিকাভুক্ত একটি সংগঠন।

 

অন্যান্যদের মধ্যে তালেবানের মন্ত্রীসভায় ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন মোল্লা ইয়াকুব এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন আমির খান মুত্তাকি। দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোল্লা আব্দুস সালাম হানাফি। মোল্লা ইয়াকুব তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বোচ্চ নেতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের ছেলে।

 

এই মন্ত্রীসভায় কেন কোন নারী প্রতিনিধি নেই, এই প্রশ্নের জবাবে তালেবানের সংস্কৃতি বিষয়ক কমিশনের প্রধান আমানুল্লাহ ওয়াসিক বিবিসিকে বলেছেন, মন্ত্রীসভার গঠন এখনও চূড়ান্ত হয়নি।তবে এর আগে তালেবান জানিয়েছিল যে মন্ত্রী পর্যায়ে কোন নারী থাকবেন না।   

 

 

 

আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফবিআইর মোস্ট ওয়ান্টেড ‘হাক্কানী

 

 

 

 

মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের নেতৃত্বেই আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন মোল্লা হাসান আখুন্দ এবং এই সরকারের উপ-নেতা হবেন তালেবান সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বারাদার।

 

রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চার সপ্তাহ পর নতুন সরকারের ঘোষণা এলো। নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে সিরাজুদ্দিন হাক্কানীর।

 

 

 

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন।  এছাড়া নতুন সরকারের উপপ্রধান হিসেবে স্থান পেয়েছেন তালেবানের আলোচিত নেতা আব্দুল গনি বারাদার।

 

 

 


আফগানিস্তানের হাসান আখুন্দের সরকারে যারা পদ পেল

 

 

 

 

মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের নেতৃত্বেই আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। এতদিন বিশ্ব মিডিয়াজুড়ে আফগানিস্তানের পরবর্তী সরকার প্রধান হিসেবে মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নাম ওঠে আসছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাবুলে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পরবর্তী তালেবান সরকারের নেতৃত্ব দেবেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ।

 

তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন মোল্লা হাসান আখুন্দ এবং এই সরকারের উপ-নেতা হবেন তালেবান সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি বারাদার।

 

 

 

 

তিনি জানান, তালেবানের উপ-নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমির খান মুত্তাকি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজনৈতিক প্রধান শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই ভারপ্রাপ্ত উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মোল্লা ইয়াকুব ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হবেন।

 

প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহম্মদ হাসান আখুন্দ তালেবানের সিদ্ধান্ত নির্ধারণকারী বিভাগ 'রেবারি শুরা'র প্রধান। জাতিসংঘের জঙ্গি তালিকায় তার নাম রয়েছে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের।

 

 

 

 

আফগানিস্তান: পাঞ্জশের দখলের দাবি তালেবানের    

 

 

 

আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা সর্বশেষ প্রদেশ পাঞ্জশের দখলের লড়াইয়ে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করেছে তালেবান।অনলাইনে তালেবান একটি ভিডিও পোস্ট করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের যোদ্ধারা শহরে তালেবানের পতাকা উত্তোলন করছে।

 

তবে বিদ্রোহী যোদ্ধারা দাবি করেছে যে, তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় অবস্থান নিয়ে রয়েছে এবং তাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে।তালেবানের বিরুদ্ধে সারা দেশে সবাইকে জেগে ওঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তাদের নেতা।

 

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা একটি অডিও বার্তায় ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অফ আফগানিস্তান (এনআরএফ) অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানকে বৈধতা দিচ্ছে এবং তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক আস্থা তৈরিতে সহায়তা করছে।''আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, দেশের ভেতরে অথবা বাইরে, আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি দেশের মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির জন্য জেগে উঠুন,'' তিনি বলেছেন।

 

 

 

তিন সপ্তাহ আগে সারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থিত সরকারের পতন ঘটিয়ে ১৫ই অগাস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে নিয়েছে এই গ্রুপটি।এর ফলে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিশ বছরের অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে।রুক্ষ পাহাড়ি উপত্যকা পাঞ্জশেরে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে।আশির দশকে সোভিয়েত অভিযান এবং ১৯৯৬-২০০১ তালেবান শাসনের সময়েও এই এলাকাটি বিদ্রোহের কেন্দ্রভূমি ছিল।

 

তালেবানের দাবি নাকচ করে দিয়ে এনআরএফের মুখপাত্র আলি মাইসাম বিবিসিকে বলেছেন, ''তালেবান পাঞ্জশের দখল করতে পারেনি''।তাদের টুইটার একাউন্টে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত তালেবান এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।'' তবে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ''এই বিজয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশকে পুরোপুরি কদর্য যুদ্ধ থেকে বের করে আনা হলো।''

 

বিবিসির সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলছেন, পাঞ্জশের যদিও আফগানিস্তানের ছোট একটি প্রদেশ, কিন্তু এই এলাকার কিংবদন্তি রয়েছে।রুক্ষ পাহাড়ি এই এলাকা সোভিয়েতরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি, তালেবানও তাদের আগের মেয়াদে ব্যর্থ হয়েছে।

 

হয়তো তালেবান পাঞ্জশেরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলো দখল করতে পারে, কিন্তু পাহাড়ি অনেক স্থান শুধু এখানকার বাসিন্দাদেরই চেনা। সেখানে হয়তো তারা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে।তবে তালেবান যেভাবে অগ্রগতি করে যাচ্ছে, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাঞ্জশের দখল হবে তাদের নতুন ইসলামিক আমিরাতের মুকুটে একটা হিরের মতো। কিন্তু বিদ্রোহী নেতা আহমদ মাসুদ এবং তালেবান সমালোচক আমরুল্লাহ সালেহও এত সহজে হয়তো ছেড়ে দেবেন না।    

 

 

 

 

 

 

আফগানিস্তানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ

 

আফগানিস্তানের সব খনিজ সম্পদের মোট মূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি

 

আফগানিস্তান বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। তবে ২০১০ সালে মেলে সুসংবাদ। মার্কিন সেনাবাহিনী ও ভূতাত্ত্বিকেরা জানান, আফগানিস্তানে রয়েছে খনিজ সম্পদের বিপুল ভান্ডার। দেশটির প্রদেশগুলোতে যেমন ছড়িয়ে রয়েছে লোহা, তামা ও সোনা, তেমনই রয়েছে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় নানা মূল্যবান পদার্থ।খবর সিএনএন  

 

 

আফগানিস্তানে খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অতি মূল্যবান লিথিয়াম। বলা হচ্ছে, লিথিয়ামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিটি দেশটিতে রয়েছে। লিথিয়াম রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরির মূল একটি উপাদান। এ কারণেই, জলবায়ু সংকট মোকাবিলার এই যুগে এসে খনিজটির চাহিদা আকাশ ছুঁয়েছে। বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের সব খনিজ সম্পদের মোট মূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

 

 

 

খনিজ সম্পদের বিষয়ে কথা বলেছেন ইকোলজিক্যাল ফিউচার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রড স্কুনোভার। নিরাপত্তা বিশ্লেষকের পাশাপাশি তিনি একজন বিজ্ঞানী। রড বলেন, নানা কারণে এত দিন আফগানিস্তানের এই খনিজ সম্পদ সেভাবে উত্তোলন করা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে নিরাপত্তার অভাব, খনিজ উত্তোলনের সক্ষমতার অভাব এবং একের পর এক খরার মতো কারণগুলো। তালেবানের অধীনেও এ পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এই সম্পদের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তান ও ভারত।

 

আফগানিস্তানের জন্য সম্ভাবনা

 

আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশা নতুন নয়। দেশটি মূলত বিদেশি সহায়তার ওপর চলছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারঘোষিত দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই খনিজ সম্পদ আফগানিস্তানের জন্য একটি আশীর্বাদ হতে পারে।

 

জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন কার্বন নিঃসরণ কমানো। এ জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি এবং কার্বন নিঃসরণ কম হয়, এমন প্রযুক্তির ওপর। এ কাজে যে পদার্থগুলো প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম, কোবাল্ট ও নিওডিমিয়াম। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা চলতি বছরের মে মাসে জানায়, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় লিথিয়াম, তামা, নিকেল, কোবাল্টসহ নানা পদার্থের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ লিথিয়াম, কোবাল্টসহ দুর্লভ খনিজগুলোর চাহিদা মেটাচ্ছে চীন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও অস্ট্রেলিয়া।

 

এখন পর্যন্ত লিথিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুত রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়। মার্কিন সরকারের হিসাব বলছে, আফগানিস্তানের লিথিয়ামের পরিমাণ বলিভিয়াকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত বছর একটি সাময়িকীতে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) কর্মকর্তা সাইদ মিরজাদ বলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যদি কিছু বছরের জন্য শান্ত থাকে, আর এ সময়ে যদি দেশটিতে খনিজ উত্তোলন ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়, তাহলে আফগানিস্তান এক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত হবে।

বাধার শেষ নেই

 

আফগানিস্তানে খনিজ উত্তোলনের পথ এতটা সুগম নয়। মার্কিন চিন্তক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক মোসিন খান বলেছেন, দেশটির খনিজ সম্পদের বেশির ভাগই উত্তোলন করা হয়নি। আফগানিস্তানের লোহা, তামা ও সোনার কিছু অংশ তোলা হয়েছে। তবে লিথিয়ামসহ অন্য বহুমূল্য খনিজগুলো উত্তোলন করতে বিশাল বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি ও সময় প্রয়োজন। কোনো খনিজের খনি আবিষ্কারের পর থেকে তা উত্তোলন শুরু করতে গড়ে ১৬ বছর লেগে যায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা।

 

মোসিন খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলারের খনিজ উত্তোলন করা হয়। তবে এই অর্থের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই চলে যায় দুর্নীতিবাজদের পকেটে। দুর্নীতিকে একটি বড় বাধা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

 

এদিকে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দিকে মন দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা মোসিন খানের। তিনি বলেন, তালেবান ক্ষমতা দখলের আগেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আফগানিস্তানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়াটা দুষ্কর ছিল। এখন তা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মোসিন প্রশ্ন রাখেন, ‘আগেই যারা আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেনি, তারা এখন করবে কেন? বিনিয়োগকারীরা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাইবে না।’

 

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও তালেবানের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংস্থার তকমা দেয়নি, তবে মার্কিন রাজস্ব বিভাগের ‘বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসীর’ তালিকায় তালেবানের নাম রয়েছে। এতে বিনিয়োগ পেতে সমস্যার মুখে পড়তে পারে তালেবান।

 

চীনের জন্য সুযোগ?

 

দুষ্প্রাপ্য খনিজ উত্তোলনে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই যোগাযোগ রেখে চলেছে চীনের সঙ্গে। এই যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে বলে গত সোমবার জানিয়েছে চীন। তাই আফগানিস্তানের খনিজের দিকে দেশটি হাত বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

ইকোলজিক্যাল ফিউচার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রড স্কুনোভার জানান, চীন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উন্নয়নে কাজ করছে। এ কাজে লিথিয়াম ও অন্য দুষ্প্রাপ্য খনিজগুলোর বিকল্প নেই। তাই চীনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর মধ্য এসব খনিজের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তবে চীনের নজর আফগানিস্তানের দিকে নেই বলে মনে করেন মোসিন খান। তিনি বলেন, এর আগেও আফগানিস্তানে তামা উত্তোলনে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল চীন। তবে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। এ কারণে দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে চীন তালেবানের সঙ্গে এক হয়ে খনিজ উত্তোলনে অংশ নিতে চাইবে না বলে মনে করেন তিনি।

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ