পূর্ব আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় চালিয়ে ইসলামিক স্টেট জিহাদী গোষ্ঠীর একটি শাখার একজন পরিকল্পনাকারী নিহত - মার্কিন সেনাবাহিনী






"আমরা ক্ষমা করব না। আমরা ভুলবো না। আমরা তোমাদের খুঁজে বের করবো এবং এজন্য তোমাদের চরম মূল্য দিতে হবে " - মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

 


 

 

আফগানিস্তান: যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা 'আইএস নিহত'

 

 

 

 

Global New News Desk   - 

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ওই ১৭০ জনের মধ্যে মার্কিন বাহিনীর ১৩ জন এবং তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন।

 

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মার্কিন বাহিনীর ১৩ জনকে ছাড়াই নিহতের সংখ্যা ১৭০ জনের পৌঁছেছে। 

 

মার্কিন সেনাবাহিনী বলছে, তারা পূর্ব আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসলামিক স্টেট জিহাদী গোষ্ঠীর একটি শাখার একজন পরিকল্পনাকারীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে।

 

নানগারহার প্রদেশে অবস্থানরত আইএস-কে গ্রুপের একজন 'পরিকল্পনাকারীকে' লক্ষ্য করে ছিল এই অভিযানটি।

 

আইএস-কে বলছে, তারা কাবুল বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার আত্মঘাতী হামলা চালায় যেখানে ১৭০ জন মানুষ নিহত হয়। এদের মধ্যে ১৩ জন আমেরিকান সৈনিকও ছিল।

 

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, প্রাথমিক তথ্য বলছে, নানগাহারে যে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলাটি চালানো হয়েছে, তার মৃত্যু হয়েছে।

 

এ হামলায় কোন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়নি বলেও যুক্তরাষ্ট্র জানাচ্ছে। 

তালেবান এ মাসের গোড়ার দিকে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেবার পর থেকে কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে গণ-উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্তির যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তা শেষ হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার।

 

এরই মধ্যে গত দু সপ্তাহে সেখান থেকে ১০ হাজারের বেশি মানুষ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ধারণা রয়েছে।

 

এই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে হামলা চালায় আইএস-কে।

 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই হামলার পেছনে যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।

 

আইএস-কে বা খোরাসান প্রদেশের ইসলামিক স্টেট মূলত ইসলামিক স্টেট গ্রুপের একটি শাখা।

 

এটি আফগানিস্তানের সব জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং সহিংস।

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পুরুষ, নারী এবং শিশুদের ভিড়ে বোমা বিস্ফোরণটি ঘটে।

 

দেশ ছাড়ার চেষ্টা করা বেশ কয়েকজন আফগান ওই হামলায় নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা সেইসঙ্গে দুই ব্রিটিশ নাগরিক এবং একজন ব্রিটিশ নাগরিকের শিশুও ছিলেন।

 

শুক্রবার হামলাকারীদের সতর্ক করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন। "আমরা ক্ষমা করব না। আমরা ভুলবো না। আমরা তোমাদের খুঁজে বের করবো এবং এজন্য তোমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।"

 

প্রায় ৫০০০ মার্কিন সেনা এখনও কাবুল বিমানবন্দরে অবস্থান করছে, যেসব আফগান নাগরিক তাদের দেশ ছেড়ে যেতে মরিয়া তাদের চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন তারা।

 

বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের পর আফগানিস্তানে এটিই প্রথম মার্কিন ড্রোন হামলার খবর।

 

সেন্ট্রাল কমান্ডের ক্যাপ্টেন বিল আরবান বলেন, "আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে মনুষ্যবিহীন আকাশ হামলা চালানো হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে আমরা লক্ষ্যবস্তুকে হত্যা করতে পেরেছি। এছাড়া আমরা জানা মতে বেসামরিক কেউ হতাহতের হননি।" 

 

কাবুল ছেড়েছে ব্রিটেনের শেষ ফ্লাইট, নতুন হামলা হতে পারে বলে মার্কিন হুঁশিয়ারি  

 

 

কাবুল বিমানবন্দরে নতুন করে জঙ্গি হামলা হতে পারে এমন আশংকার মধ্যে সেখান থেকে আফগানদের উদ্ধারের জরুরী অভিযান এখন শেষ হওয়ার পথে।

 

বেসামরিক মানুষদের নিয়ে ব্রিটেনের সর্বশেষ ফ্লাইট কাবুল ছেড়েছে। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আজকেই আরও পরের দিকে ব্রিটেনের উদ্ধার অভিযানেরও সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

 

কাবুল থেকে ইতালির সর্বশেষ উদ্ধার ফ্লাইটও শনিবার রোমে পৌঁছেছে। এর আগে জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও তাদের উদ্ধার অভিযান শেষ করার কথা ঘোষণা করে।

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের আবারও সতর্ক করে দিয়েছে তারা যেন কাবুল বিমানবন্দর এড়িয়ে চলে। তবে সেখানে তারা শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রাখবে।

 

ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধার অভিযান আজ শেষ হচ্ছে। জেনারেল স্যার নিক কার্টার জানিয়েছেন, কাবুল থেকে এখনো কিছু ফ্লাইট যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ছে, কিন্তু এগুলোর সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, সবাইকে যে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি, সেটা খুবই হৃদয়বিদারক। আফগানিস্তান থেকে ব্রিটেনে আসার উপযুক্ত বহু আফগানকে সেখানে রেখে আসতে হচ্ছে।

 

তালেবান এমাসে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেখান থেকে গণহারে উদ্ধার অভিযান শুরু করে বিভিন্ন দেশ। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা গত ১৩ই অগাস্ট হতে এপর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৪৩ জনকে উদ্ধার করেছে।

 

বিবিসির টুডে অনুষ্ঠানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যার নিক কার্টার বলেন, "আমরা আমাদের উদ্ধার অভিযানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছি। আজকের (শনিবারের) মধ্যেই এটি শেষ হবে। এরপর বাকি বিমানগুলোতে করে আমাদের সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে হবে।" 

 

 

উদ্ধার অভিযান যখন পুরোদমে চলছিল, তখন সেখানে প্রায় এক হাজার ব্রিটিশ সৈন্য ছিল। তবে এর মধ্যে কিছু সৈন্য আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। 

 

 

মার্কিন হুঁশিয়ারি

 

কাবুল বিমানবন্দর ব্যবহারের বিরুদ্ধে মার্কিন দূতাবাস আবারও মার্কিন নাগরিকদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। কয়েক ঘন্টা আগে দেয়া এই হুঁশিয়ারিতে আফগানিস্তানের মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তারা যেন বিমানবন্দরে যাওয়া এড়িয়ে চলে এবং বিমানবন্দরের কোন গেট ব্যবহার না করে। যারা এরই মধ্যে বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রবেশপথে অপেক্ষা করছে, তাদের অবিলম্বে সেই স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। 

 

তালেবান দাবি করছে, তারা কাবুল বিমানবন্দরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবি অস্বীকার করছে।

 

কাবুল বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল আইএস-কে (ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স)।

 

মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে একটি ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসলামিক স্টেট খোরাসান গ্রুপের এক নেতাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। মার্কিন বাহিনী দাবি করছে, গত বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পেছনে এই ব্যক্তি অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিল তাদের বিশ্বাস।  

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ