ওই যুবকের গলা থেকে কোমর পর্যন্ত একটি ছবি রয়েছে। বাহাতে ব্রাউন রঙের ঘড়ি পরা ছিল ও সাদা ফ্লোরাল প্রিন্টের ফুল শার্ট ছিল গায়ে। আর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল – পুলিশ
ফেসবুক গ্রুপে অস্ত্রের ব্যবসা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো ‘গ্রুপ’খুলে চলছিল অস্ত্র কেনাবেচার কারবার। সেখানেই অস্ত্র দেখিয়ে ঠিক হত দাম-দর। তার পরে সে সব দেওয়া হতো ‘হোম ডেলিভারি। অস্ত্র পৌঁছে যেত নির্দিষ্ট ঠিকানায় । ভারতের কলকাতার মানিকতলায় দীর্ঘ দিন ধরেই চলা এই ব্যবসার খবর পেয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
ব্রাউন লেদারের হাত ঘড়ি ও সাদা শার্টের সূত্র ধরে পুলিশের জালে বমাল ধরা পড়ল অভিযুক্ত। হোয়াটস্যাপ ও ফেসবুকের ক্লোজড গ্রুপে অস্ত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে হাতে অস্ত্র নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করে ধৃত কিষান জসওয়ারা।
পুলিশ সুত্রে খবর, ওই যুবকের গলা থেকে কোমর পর্যন্ত একটি ছবি রয়েছে। বাহাতে ব্রাউন রঙের ঘড়ি পরা ছিল ও সাদা ফ্লোরাল প্রিন্টের ফুল শার্ট ছিল গায়ে। আর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
এরপর সেই ক্রিমিনাল গ্রুপের খোঁজ পায় মানিকতলা থানার পুলিশ। সেই পোস্ট করা ছবি সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশ সুত্রে খবর, ওই গ্রুপের উপর নজরদারি চালাতে শুরু করে তারা। পুলিস জানতে পারে কিষান জাসোয়ারা নামে এক যুবক ওই পোস্ট করেছে।
কিষানের ফেসবুকে নাম ছিল ডি জে হার্দিক জয়সারা। ওই নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ক্লোজড গ্রুপে ওই ছবি পোস্ট করেছিল কিষান। তারই সূত্র ধরে পুলিশ ক্যানেল ইস্ট রোড থেকে কিষানকে প্রথমে আটক করে।
গ্রুপে পোস্টের ওই সাদা ফ্লোরাল প্রিন্টের জামাটি উদ্ধার
পুলিশ দেখে জসওয়ারা হাতে ওই ব্রাউন কালারের লেদারের ঘড়ি। তাই দেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিহারের বাসিন্দা কিষান আগে কাকিনারা এলাকায় থাকতো। সেখানে তার বেশ কিছু সহযোগী রয়েছে। এছাড়া লাস্ট কয়েক বছর ধরে হরিশ নিয়োগী রোডে থাকছে সে। পুলিশ কিষানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রথমে সে অস্বীকার করে। কিষান পুলিশকে জানায় এটা পুরোনো ঘড়ি।
এরপর পুলিশ নিশ্চিত হতে এরপরেই কিষানের হরিশ নিয়োগী রোডের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি করে সোশ্যাল গ্রুপে পোস্টের ওই সাদা ফ্লোরাল প্রিন্টের জামাটি উদ্ধার করে। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত কিষান জয়সাওরাকে।
গ্রেপ্তার কিষাণকে রোববার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। সেখানেই সরকারি আইনজীবী ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করেন। বিচারক ৫ আগষ্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, এর পর অভিযুক্তকে জেরা করলে অভিযোগ স্বীকার করে সে।জেরার সময় আরও একটি বন্দুকের খোঁজ করতে সে ভাটপাড়ায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে সেটি রাখা আছে বলে জানায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে তৈরি করা ওই গ্রুপে নিয়ম করে অস্ত্রের ছবি দিত কিষাণ। সেই গ্রুপে শহর এবং শহরতলীর দুষ্কৃতীরা ছাড়াও জেলার একাধিক কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা ছিল। সেখানেই চলত অস্ত্রের কেনাবেচা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা অভিনব বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই যুবকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা মামলা আগেও রযেছে। তার বিরুদ্ধে ফের নতুন করে অস্ত্র আইনেও মামলা দায়ের করা হলো।
ওই যুবক একা নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্ত্রের কারবারের সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজন। একটা চক্র কাজ করছিল। ধৃতকে জেরা করে কয়েকজনের নামও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই যুবক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির ছক কষেছিল।
অন্যদিকে যুবককে জেরা করে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়াতে হানা দেয় পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বিজ্ঞাপন দিয়ে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা অভিনব বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। আগে ওই যুবক এভাবে কাউকে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেছে নাকি এই প্রথম তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, জুলাই মাসের গোড়ার দিকে গুলি চলেছিল থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। ভাটপাড়া পুরসভার দোরগোড়ায়। প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন পুর–প্রশাসক হিমাংশু সরকার। আহত হন তাঁর সহকারী সৌরভ দাস।
পুলিশ ধৃতকে জেরা করে জানতে পারে, পেশায় ক্যাব চালক কিষানের অস্ত্র বিক্রির জন্য একটি বিশাল চক্র আছে কাঁকিনারা, ভাটপাড়া এলাকাতে। ধৃতের থেকে উদ্ধার হয় সিঙ্গেল শাটার আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ।
জেরা করে জানা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া ক্লোজড গ্রুপে যে ছবি পোস্ট হয়েছিল সেইখানে যে আগ্নেয়াস্ত্রর ছবি সেটি ভাটপাড়া খুনের ঘটনায় মোস্ট ওয়ান্টেড অভিযুক্তর কাছে রয়েছে।
দাবি, ছেলেকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে
এরপর মানিকতলা থানার পুলিস অভিযুক্তকে নিয়ে ভাটপাড়া এলাকায় মানিকতলা থানার পুলিশ ও ভাটপাড়া পুলিশ যৌথ উদ্যোগে ভাটপাড়ায় শনিবার তল্লাশি করে।
সম্প্রতি ভাটপাড়ায় খুনের ঘটনায় ওই মোস্ট ওয়ান্টেড ( সুমিত ) পলাতক। তার ভাটপাড়ায় বাড়িতে তল্লাশি করে পুলিস অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
এই ঘটনায় ধৃত কিষান জেরায় জানিয়েছে, অস্ত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে সে সোশ্যাল সাইটে দুষ্কৃতীদের ক্লোজড গ্রুপে ছবি পোস্ট করেছিল।
অন্যদিকে, কিষানের বাবা শঙ্কর রাম জসোয়ারা দাবি, ছেলেকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। কে ওই ছবি পোস্ট করেছে তা তারা জানেন না। শনিবার পুলিশ এসে ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়।
কাকে বিক্রি উদ্যেশ্য ছিল? অস্ত্র ডিলিংয়ে আর কে কে জড়িত ? কোথা থেকে পেল অস্ত্র? কত টাকায় লেনদেন হত? ভাটপাড়া ওই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েছিল কবে? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানিকতলা থানার তদন্তকারী অফিসাররা।
0 মন্তব্যসমূহ