আফগানিস্তান : ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের পরামর্শক কে ধরে নিয়ে গেছে তালেবান সদস্যরা



 

আফগানিস্তান : প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে তালেবান

         

 

Global New News Desk  - 

আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পরামর্শক ও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা । ধর্মীয় পণ্ডিতদের জাতীয় পর্ষদের প্রধান । মৌলভি মোহাম্মদ সরদার জাদরানকে তালেবান সদস্যরা তাকে খোস্ত প্রদেশ থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে তার ছেলে জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।

 

আফগানিস্তানে মৌলভি জাদরানের বিপুলসংখ্যক অনুসারী রয়েছে। তাকে চোখ বেঁধে বসিয়ে রাখার একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তালেবানকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছিলেন বলে কোনো কোনো সূত্র বলছে। আর এ কারণে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

 

 

আফগানিস্তান : যে সব শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে নারীরা

 

আফগানিস্তান : ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে না     

 

 

 

আফগান তালেবানের ভারপ্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি স্থানীয় সময় রোববার এই ঘোষণা দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

 

আফগানিস্তানে নতুন আইনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধা নেই নারীদের, তবে এক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছে তালেবান। তারা বলছে, ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে না।

 

তিনি বলেন, নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ও পড়াশোনা করতে পারবে। তবে আমাদের আইন অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে ক্লাস করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

 

আবদুল বাকি হাক্কানি জানান, শরিয়াহ আইন অনুসারে আফগানিগানিস্তানের মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করবে। নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার অনুমতি দেওয়া হলেও মিশ্র ক্লাস নিষিদ্ধ হবে। মিশ্র নরনারীর পরিবেশ ছাড়া নিরাপদে আফগানরা উচ্চশিক্ষা অব্যাহত রাখতে পারবে।

 

তিনি জানান, তারা ইসলামিক, জাতীয় ও ঐতিহাসিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি যুক্তিসংগত ও ইসলামিক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে চান। একইসঙ্গে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করতে চান।

 

এএফপি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবানের শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাতেও ছেলেমেয়েদের আলাদা করা হবে, বিষয়টি অতিরক্ষণশীল এই দেশে আগে থেকেই প্রচলিত।

 

একের পর শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাবুল দখলের ঘোষণা দিয়ে গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেয় তালেবান। ওই সময়ই পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। ক্ষমতা দখলের পর দেশ নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনার কথা জানায় তালেবান।

 

তালেবান কাবুল দখলের পরপরই আফগানিস্তান ছাড়তে মরিয়া হয়ে ওঠে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয় নিতে শুরু করে। কাবুল বিমানবন্দরে হুড়োহুড়িতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ বিমানবন্দরে হামলায় ১৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

 

 

ভয় পাবেন না :আফগান টিভির পিস স্টুডিওর রাজনৈতিক বিতর্ক অনুষ্ঠানের ৪২ সেকেন্ড

 

ভয় পাবেন না :পেছনে সশস্ত্র তালেবান ,সামনে সংবাদ উপস্থাপক   

 

 

ভিডিও টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আফগানিস্তানে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান। কিন্তু ওই ভিডিও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন দুজন সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধা। সেভাবেই টেলিভিশনে খবর পড়ছেন সংবাদ উপস্থাপক।  দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলছেন, ভয় পাবেন না।

 

আফগানিস্তানের এই সংবাদ উপস্থাপকের ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।বিবিসির সাংবাদিক কিয়ান শরীফি আফগান টিভির পিস স্টুডিওর রাজনৈতিক বিতর্ক অনুষ্ঠানের ওই ৪২ সেকেন্ডের ভিডিওটি টুইটারে পোস্ট করেছেন।

 

 

ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করে ইরানি নারী সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ লিখেছেন, কী অদ্ভূত। তালেবান জঙ্গিরা এই ভীত টেলিভিশন উপস্থাপকের পেছনে বন্দুক নিয়ে অবস্থান করে তাকে ‘ভয় পাবেন না’ বলতে বাধ্য করছে।  তালেবান নিজেই লাখ লাখ মানুষের মনে ভয়ের পরিপূরক। এটা তারই আরেকটি প্রমাণ।

 

মুখে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত সপ্তাহেই ডয়েচে ভেলের এক সাংবাদিককে না পেয়ে তার আত্মীয়কে হত্যা করেছে তালেবান। এছাড়া আরও তিন সাংবাদিকের খোঁজে তাদের বাড়িতে তালেবান অভিযান চালিয়েছে বলে ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে।

 

কাবুলে টোলো নিউজের এক দায়িত্বরত সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনকে তালেবান যোদ্ধারা মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর সাংবাদিকের ওপর হামলার অন্তত সাতটি ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের বরাত দিয়ে ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে।

 

এদিকে, তালেবানের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন  স্থানীয় টেলিভিশন চ্যালেন তোলো নিউজের নারী সাংবাদিক বেহেস্তি আরঘান্দ। প্রথমবারের মতো লাইভে তালেবানের মিডিয়া টিমের সদস্য মাওলানা আবদুল হক হেমাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে শিরোনামে এসেছিলেন এই নারী সাংবাদিক।

 

দুদিন আগেই টেলিভিশন ও  রেডিও চ্যালেনগুলোতে নারী কণ্ঠ সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। এর আগে দেশটিতে গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছিল রক্ষণশীল এই সংগঠনটি।

 

শনিবার আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহারের শীর্ষ স্থানীয় একটি রেডিও চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই ঘোষণা দেয় তালেবান।

 

আফগানিস্তানের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী এখন  জার্মানিতে পিৎজা ডেলিভারি ম্যান

 

আফগানিস্তান :সাবেক মন্ত্রী যখন পিৎজা ডেলিভারি ম্যান

 

 

সাদাতের পিৎজা বিক্রির ছবি আলজাজিরা সংবাদমাধ্যম প্রকাশ্যে এনেছে। টুইট করেছে, জার্মানির লিপজিগ শহরে সাইকেলে চেপে পিত্জা ডেলিভারি করার ছবি। একসময় ছিলেন আসরাফ ঘানির মন্ত্রিসভায়। ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন সাঈদ আহমদ সাদাত। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মন কষাকষির কারণে পদত্যাগ করেন তিনি। চলে যান জার্মানিতে। কিন্তু পেটের টানে এখন পিৎজা বিক্রি করে দিন চলছে সাবেক এই মন্ত্রীর।

 

 

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে লিপজিগেই থাকেন সাদাত। সঞ্চয় ফুরোতেই খারাপ অবস্থা তার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে তার পকেটে। কর্মসূত্রে সৌদি আরবসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে ঘুরেছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে জানিয়েছেন তিনি।ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই নিউজ ভাইরাল হয়েছে।

 

এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে বিশেষ সাক্ষাৎকার নেয় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

 

মন্ত্রী থেকে ডেলিভারি বয় হওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সাবেক আফগান মন্ত্রী সাঈদ আহমদ সাদাত বলেন, কাজ কাজই। কোনো কাজই ছোট নয়। এতে লজ্জার কিছু নেই।

 

তিনি আরও বলেন, ‘আপনার একটা কাজ আছে। এর মানে মানুষের কাছে সেই কাজটার চাহিদা আছে। সুতরাং কাউকে না কাউকে সেটা করতেই হবে।'

 

আলজাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এক সময় পুরো একটা মন্ত্রণালয় চালালেও এখন জার্মানিতে কোম্পানি ইউনিফর্ম পরে পিৎজা ডেলিভারির কাজ করেন তিনি। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি কোনোদিন আফগান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। তাতে অবশ্য কোনো আফসোস নেই সাদাতের। শান্তির খোঁজে রক্তাক্ত কাবুল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের জীবনকে এভাবেই গুছিয়ে নিতে চান তিনি।

 

মাতৃভূমি আফগানিস্তান থেকে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে এখন তার দিন কাটে।

 

জার্মানির লিপজিগে পালিয়ে আসেন গত ডিসেম্বরেই। ছিলেন আফগান সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী। আর এখন তার পরিচয় ডেলিভারি বয়। সাইদ আহমদ সাদাতকে এখন প্রায়ই লিপজিগের রাস্তাঘাটে দেখা যায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। 

 

বিন লাদেনের বিশ্বস্ত দেহরক্ষী আফগানিস্তানে নিজ বাড়িতে ফিরলেন

 

আফগানিস্তান : বাড়ি ফিরলেন বিন লাদেনের বিশ্বস্ত দেহরক্ষী

 

 

সোমবার ওসামা বিন লাদেনের বিশ্বস্ত দেহরক্ষী আমিনকে দেখা গেল সাদা গাড়িতে চড়ে তার আফগানিস্তানের ‘দেশের বাড়ি’তে ফিরতে। আল কায়দার শীর্ষনেতা আমিন এক সময় লাদেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এমনকি তার প্রধান দেহরক্ষীর দায়িত্বও পালন করেছেন। নানগরহর প্রদেশে আমিনের বাড়ি।

 

তার বাড়ি ফেরার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে আফগানিস্তানের এক সাংবাদিক লিখেছেন- ‘তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর দেশে ফিরলেন আলকায়দার বড় নেতা আমিন উল হক।’

 

তোরা বোরার যুদ্ধ হয়েছিল ২০০১ সালে। আফগানিস্তানের মসনদে সেটা তালেবানের অন্তিম বছর। তার দশ বছর পর পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে আমেরিকার সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ওসামা। সেই ঘটনার পর থেকে নানগরহরে আর দেখা যায়নি আমিনকে।

 

 

আফগানিস্তান: শেষ হলো দুই দশকের যুদ্ধ , সর্বশেষ সি-১৭ বিমান কাবুল ছেড়েছে  




আফগানিস্তান: আমেরিকার শেষ সামরিক বিমানটি কাবুল ছেড়েছে

 

 

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে করে সর্বশেষ সি-১৭ বিমান কাবুল ছেড়েছে।

 

তিনি জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যারা এখনো কাবুল ত্যাগ করতে পারেননি, তাদের সহায়তা করার কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

 

গত দুই দশকের যুদ্ধ শেষে অবশেষে আফগানিস্তান ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সামরিক বিমান। এর মাধ্যমে দেশটিতে আমেরিকার ২০ বছর ধরে অবস্থানের অবসান হলো।

 

সর্বশেষ বিমানটি কাবুল ত্যাগ করার পর কাবুলে তালেবানে বিজয়সূচক গুলির আওয়াজ শোনা গেছে।

 

এই বিমানটির কাবুল ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ এবং তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ব্যাপক উদ্ধার অভিযানের অবসান হলো।

 

গত ১৪ই আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তালেবান। সেই সময় থেকেই মূলত কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল।

 

 

যুক্তরাষ্ট্র কাবুল ছাড়ার পর তালেবান বিমানবন্দরে ঢুকে দ্রুত মার্কিন সামরিক সরঞ্জামগুলোর দখল নিয়েছে

 

জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এবং জোট বাহিনীর বিমানগুলোয় করে সব মিলিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার বেসামরিক ব্যক্তিকে সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাসিন্দা কাবুল ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

 

এই ঘোষণা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে বলেছেন, এটি ছিল ''ব্যাপক সামরিক, কূটনৈতিক এবং মানবিক কর্মযজ্ঞ' এবং যা যুক্তরাষ্ট্র অনেক চ্যালেঞ্জের সাথে বাস্তবায়ন করেছে।

 

''নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো,'' তিনি বলেছেন। ''সামরিক মিশন সমাপ্ত হয়ে নতুন এক কূটনৈতিক মিশন শুরু হল।''

 

তবে তিনি এও বলেছেন যে, তালেবানকে বৈধতা অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কিনা এবং নাগরিকদের ভ্রমণে স্বাধীনতা দেয়া, নারীদের অধিকার রক্ষা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করছে কিনা-এসব বিষয় বিশ্ববাসীর নজরে থাকবে।

 

তিনি জানিয়েছেন, কাবুলে কূটনৈতিক মিশন স্থগিত করে দোহায় নিয়ে যাওয়া হলেও, আমেরিকান নাগরিক এবং যে আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট রয়েছে, তারা চাইলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে সহায়তা করবে।

 

গত ১৭ দিন ধরে চলা এই উদ্ধার অভিযানে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মঙ্গলবার আরও পরের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারেন।

 

২০০১ সালের সাতই অক্টোবর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী। কারণ তখন দেশটিতে ক্ষমতায় থাকা তালেবান নেতারা আল-কায়েদার ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি।

 

সেই বছর নভেম্বরে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় মার্কিন জোট সমর্থিত তালেবান বিরোধী বাহিনী নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।   

 

আফগানিস্তান : তালেবানের ‘সুপ্রিম লিডারকে এই আখুনজাদা  ?

 

তালেবানের সুপ্রিম কমান্ডারের দায়িত্বে যিনি ,বিশ্ববাসীর কাছে তার পরিচয় বলতে কেবল একটি ছবি  !            

 

 

চলতি মাসের মাঝামাঝি তালেবান দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর ফের আখুনজাদা কোথায় আছেন সেই প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে। এমনকি দীর্ঘ দুই দশক পর তালেবান ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সংগঠনের শীর্ষ কয়েকজন নেতা দেশে ফিরলেও আখুনদাজা আড়লেই রয়ে গেছেন।

 

পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর তালেবানের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, কঠোর মনোভাবের কমান্ডো এবং বন্দুকধারী মাদরাসার ছাত্ররা রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেছে। ব্যতিক্রম শুধু একটি জায়গায়। এই সংগঠনের সুপ্রিম লিডার বা সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা এখনও কাবুল শহরে প্রবেশ করেননি।

 

তাকে কোথাও দেখাও যায়নি। ঈমানদারদের কথিত এই কমান্ডার ২০১৬ সাল থেকে তালেবান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু লোকসমক্ষে তাকে খুব একটা দেখাও যায় না।

 

২০১৬ সালে তালেবানের দায়িত্ব গ্রহণের পর সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তিনি। সে সময় কিছুদিনের জন্য তিক্ত ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল তালেবান।

 

হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার পূর্বসূরী মোল্লা মানসুরের হত্যাকাণ্ড এবং তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর কথা গোপন রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালেবানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।

 

হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার প্রতিদিনের কর্মসূচি সম্পর্কে খুবই কম জানা যায়। সাধারণত ইসলামী পবিত্র দিনগুলোতে বার্ষিক বাণী প্রদানের মধ্যেই তার পাবলিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ।

 

এ পর্যন্ত তালেবান তার একটি সিঙ্গেল ফটোগ্রাফ প্রকাশ করেছে, কখনও তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি এবং তিনি কোথায় থাকেন তাও জানা যায় না। ফলে তাকে নিয়ে ঘুরছে নানা প্রশ্ন।

 

অবশ্য শীর্ষ নেতাদের আড়ালে রাখার বিষয়টি তালেবানের  জন্য নতুন নয়। তালেবানের অন্যতম নেতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমরও এভাবে আড়ালে থাকার জন্য সুপরিচিত।  তালেবানের প্রথম দফার শাসনামলেও তাকে খুব কমই কাবুলে আসতে দেখা গেছে।  বেশির ভাগ সময় কান্দাহারেই কাটাতেন মোল্লা ওমর।  এমনকি সফররত বিদেশি প্রতিনিধিদের সাথেও দেখা করতে চাইতেন না তিনি।

 

আখুনজাদার অবস্থান বা তার দৈনন্দিন জীবন নিয়ে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। ধর্মীয় ছুটির দিনে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বার্তা ছাড়া আর কোনো তথ্যই তিনি প্রকাশ্যে আনেননি।

 

গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আখুনজাদার অবস্থান বিষয়ক প্রশ্নে আরও কৌশলী হয়েছে।তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আল্লাহ চাইলে খুব শিগগির আপনারা তাকে দেখতে পাবেন।’

 

তালেবানের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে এসেছেন, তখন হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদাও প্রকাশ্যে আসবেন বলে ধারণা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

তারা মনে করছেন, আখুনজাদা আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশ বা পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায় গোপন আস্তানায় রয়েছেন।

 

তবে শীর্ষ নেতাদের বরাবরই আড়ালে রাখার প্রবণতা তালেবানের। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর তালেবানের শাসনামলেও নিজেকে আড়ালে রেখেছিলেন। দলের অনেক নেতার সঙ্গেই তিনি দেখা করতে চাইতেন না। তিনি বলতেন, আন্দোলনের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কেবলমাত্র তিনি একক ব্যক্তি নন তালেবানে।

 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান লরেল মিলার এএফপিকে বলেছেন, আখুনজাদাও মোল্লা ওমরের মতো নিখুঁত গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন।

 

মোল্লা ওমরের কাছ থেকেই আখুনজাদা  এরকম নেপথ্যে থাকার অভ্যাস পেয়েছেন বলে  ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধান লরেল মিলার জানিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার জন্যও আখুনজাদা নিজের অবস্থান জানান না বলে জানিয়েছেন লরেন। তিনি বলেন, ‘আখুনজাদা তার পূর্বসূরি মোল্লা আখতার মনসুর হত্যার বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে দৃশ্যপটে আবারও হাজির হতে পারেন। প্রথাগতভাবে তিনি দূর থেকেই তালেবান নিয়ন্ত্রণ করবেন বলেই মনে করছি।’

 

আশির দশকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সামরিক নেতার তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসেবে তার পরিচিতি বেশি। আখুনদাজা ১৯৯০ এর দশকে আফগানিস্তানের শরিয়া আদালতের প্রধান ছিলেন। আখুনদাজা বয়স ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয় এবং জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন।

 

 

পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘বিদেশি সৈন্যরা যত দিন আফগানিস্তানে থাকবেন, তালেবান তাদের জিহাদ অব্যাহত রাখবে। তাদের সর্বোচ্চ নেতাকেও তারা এ কারণেই সামনে নিয়ে আসছে না।’

 

১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে আমিরাত প্রতিষ্ঠা করে। তখন আখুনজাদা আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের শরিয়াহ আদালতের প্রধান বিচারক নিযুক্ত হন।

 

তালেবানের অন্যান্য নেতাদের মত তিনি সামরিক কমান্ডার ছিলেন না। কিন্তু ধর্মীয় নেতা হিসেবে তালেবানের অধিকাংশ ফতোয়া তিনি জারি  করতেন। ধর্মীয় ব্যাপারগুলো নিষ্পত্তি করতেন তিনি।

 

২০১৬ সালের ২৫ মে আখুনজাদাকে মোল্লা আখতার মনসুরের উত্তরসূরি হিসেবে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মনসুর একটি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

 

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলায় তালেবান যখন একেবারে কোণঠাসা অবস্থায়, তখন আখুনজাদা সঙ্কট মোকাবেলা করে তালেবানকে  আরও দুর্ধর্ষ করে তুলতে পরিকল্পনা নেন। ন্যাটো বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমনের মধ্যেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া তালেবান সদস্যদের একত্রিত করা, ন্যাটোর উপর পাল্টা আক্রমনের ছক কষা,  দলে একতা ধরে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো তিনি পালন করেছেন।

 

এর আগে গুজব ছড়িয়েছিল, আখুনজাদা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ বলেছেন, তিনি ন্যাটো বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।

 

তবে এরই মধ্যে তালেবানের উপমুখপাত্র বিলাল করিমি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন যে, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে পৌঁছেছেন।

 

তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করছি, তিনি (হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা) কান্দাহারে পৌঁছেছেন। শিগগিরই জনসমক্ষে আসবেন তিনি।”

 

হাইবাতুল্লাহ কোথায় ছিলেন বা কোন জায়গা থেকে কান্দাহারে এলেন— এ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি বিলাল করিমি। ১৫ আগস্ট কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম হাইবাতুল্লাহর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলল তালেবান।

 

এদিকে আগামী এক অথবা দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে তালেবান। তবে এই মন্ত্রিসভায় নারীরা দায়িত্ব পালন করবেন কি না, সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ গত শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানান। তবে ঠিক কখন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।  

 

ইমতিয়াজ গুল বলেন, দীর্ঘ একুশ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর তালেবান যখন আবারও ক্ষমতাসীন হতে চলেছে, তখন আখুনজাদার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, দলে একতা ধরে রাখা। কারণ দীর্ঘ সময়জুড়ে লড়াইয়ে দলে নানা বিভক্তি এসেছে। ছোটবড় উপদল তৈরি হয়েছে, যা কেন্দ্র থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। তাদের বিভক্তি মেটানো হবে আখুনজাদার অন্যতম দায়িত্ব ।

 

দলের সুপ্রিম লিডার হিসেবে রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রধান আখুনদাজা । উচ্চশিক্ষিত আখুনজাদা সেই অর্থে তালেবানের হয়ে জঙ্গি কার্যকলাপে অংশ নেয় না। বরং ইসলামের নানা ব্যাখ্যার কাজ করে থাকেন তিনি। যে সাত নেতার হাতে আফগানিস্তানের দায়িত্ব বর্তাবে বলে মনে করা হচ্ছে আখুনজাদা তাদের অন্যতম।  

 

 

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ