আফগানিস্তান: হামলার দ্বায় স্বীকার আইএস- এর , মৃত্যু বেড়ে ১৭০



 

আফগানিস্তান: কাবুল বিমান বন্দরে হামলা করেছে আইএস

 

 

Global New News Desk  - 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি মিত্র দেশ কাবুল বিমান বন্দরে সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে ক'দিন ধরেই সতর্ক করে আসছিল।এর পরেও ঘটে গেল বোমা হামলার ঘটনা । ঘটনার দ্বায় স্বীকার করেছে আইএস । আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার (২৭ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ওই ১৭০ জনের মধ্যে মার্কিন বাহিনীর ১৩ জন এবং তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকও রয়েছেন।  

 

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, মার্কিন বাহিনীর ১৩ জনকে ছাড়াই নিহতের সংখ্যা ১৭০ জনের পৌঁছেছে। 

 

 

 

 

আফগানিস্তান: কাবুল বিমানবন্দরে হামলাকারী কারা এই আইএস-কে 

 

 

আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর সাবেক অধিনায়ক কর্নেল রিচার্ড কেম্প বলেছিলেন, কাবুলে যেদিন থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই হামলার হুমকি তৈরি হয়েছে।

 

"সন্ত্রাসী হামলার হুমকি এটা যে কারো কাছ থেকে আসতে পারে - তালেবান, ইসলামিক স্টেট কিংবা আল কায়দা। এদের যে কোনটির কাছ থেকেই আক্রমণ আসতে পারে,'' বলেছিলেন তিনি।

 

কারা এই আইএস-কে

 

আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী যে নাম ব্যবহার করে তা হলো ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স।

 

এখানে খোরাসান শব্দটি এসেছে আধুনিক আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে যে অঞ্চল তার প্রাচীন নাম থেকে। 

আইএস-কে গোষ্ঠীর জন্ম ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে।

 

এর মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশে।পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এই এলাকাটি মাদক ও মানুষ পাচারের জন্য কুখ্যাত।

 

এর সদস্যরা মূলত আফগান ও পাকিস্তানী জিহাদি। আফগান তালেবান থেকে দলত্যাগী অনেকেই আইএস-কে‌'তে যোগ দিয়েছে। 

 

 

তালেবানের চেয়েও কট্টর

 

আফগানিস্তানের তালেবানের চেয়ে আইএস-কে বহুগুণ বেশি কট্টরপন্থী।তারা আফগান তালেবানকে শত্রু বলে মনে করে। ইসলামী বিধানের তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মনে করে যে 'মুরতাদ' হিসেবে তালেবানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো 'জায়েজ' (বৈধ/আইনসিদ্ধ)।

 

গত বছর ২৯শে ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয় আইএস-কে তার নিন্দা জানায় এবং বলে যে তারা আফগানিস্তানে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে।

 

এই গোষ্ঠী একই সঙ্গে তালেবানের আফগানিস্তান দখলকে নাকচ করে দিয়ে দাবি করে যে এক গোপন চুক্তির অংশ হিসেবে আমেরিকানরা আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে।

 

বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, এর পরও তালেবানের সাথে আইএস-কে'র এক ধরনের যোগাযোগ রয়েছে, বিশেষভাবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।

 

গবেষকদের উদ্ধৃত করে তিনি জানাচ্ছেন, আইএস-কে এবং হাক্কানি গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।

 

অন্যদিকে হাক্কানি গোষ্ঠীর সাথে রয়েছে তালেবানের সম্পর্ক। 

দু'হাজার উনিশ সালে আইএস-কে সামরিকভাবে বড় ধরনের পরাজয়ের মুখোমুখি হয় এবং ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তাদের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়।

 

তবে এরপরও আইএস-কে তার শক্তি ফিরে পায় এবং কাতারে তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা চলার সময়টিতে আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে।

 

ফ্র্যাংক গার্ডনার জানাচ্ছেন, শুধু গত বছরই আইএস-কে আফগানিস্তানে ২৪টি হামলা পরিচালনা করেছে।

 

মেয়েদের স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডেও আইএস-কে হামলা চালিয়েছে যেখানে তারা গর্ভবতী নারীদের গুলি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

তারা ২০১৮ সালে ইরানের মধ্যেও একটি হামলা চালায়।

 

সাংগঠনিক দিক থেকে আইএস-কে শুরুতে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে নিয়ে গঠিত হলেও ২০১৯ সালের মে মাসে ইসলামিক স্টেট 'পাকিস্তান প্রদেশ' নামে স্বতন্ত্র একটি গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করে।

 

আইএস-কে যাদের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনা করেছে তারা হলো আফগান সামরিক বাহিনী, আফগান রাজনীতিক, তালেবান, শিয়া মুসলমান ও শিখসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মার্কিন ও নেটো বাহিনী, এবং সে দেশে কর্মরত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও আর ত্রাণ সংস্থা। 

 

 

আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কামান্ডার মাইক জ্যাকসন যিনি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বলছেন, পর্যবেক্ষরা "সবাই আশংকা করছিলেন এমনটা ঘটবে"।

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর পেছনে সম্ভবত আফগানিস্তানের ইসলামিক স্টেটের শাখা আইসিস-খোরাসানের হাত রয়েছে।

 

কর্নেল জ্যাকসন বলেছেন তার ধারণা আইসিস-খোরাসান দেশত্যাগী মানুষের ওপর 'নিশ্চিতভাবে' আরেকটি হামলা চালাবে।

 

"তাদের হাতে অস্ত্র ও সরঞ্জাম আছে এবং তাদের ঐ এলাকায় হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে," তিনি বলেন। "তাদের লক্ষ্যবস্তু হল নিরস্ত্র মানুষ যারা দেশ ছাড়তে মরিয়া।"  

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ