ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ব্যবহার করা যায় না যে তিন দেশে : বিশ্বজুড়ে ভিআইপিদের পকেটে গুপ্তচর


 

পকেটেই গুপ্তচর!  এতে খরচ কত?  টার্গেটে যারা  ,পেগাসাস যেভাবে তথ্য ফাঁস করে ,রিসিভ না করলেও সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে , "দ্য ইন্সিটিটিউট অফ ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস" মোসাদ ,নির্বাহী অফিস , ইতিহাস , ১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সংস্থাটার প্রধানের কথা

 

 

ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ব্যবহার করা যায় না যে তিন দেশে

 

 

 

Global New News Desk -

 

গ্রীক পুরাণের সবচেয়ে পরিচিত প্রাণীটি হচ্ছে পেগাসাস বা পক্ষিরাজ ঘোড়া (প্রাচীন গ্রিক: Πήγασος, Pégasos, ল্যাটিন: Pegasus) নামক ঘোড়া যার দুটি ডানা রয়েছে। এর গায়ের রং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা হয়ে থাকে।

 

 

 

 

গ্রিক পুরাণ অনুসারে, পার্সিয়াস যখন মেডুসের মাথা কন্ঠ থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন, তখন মেডুসার কন্ঠনালী থেকে যে রক্ত নির্গত হয় তা থেকে পেগাসাস এবং সিরেসোর-এর জন্ম হয়।

 

পক্ষিরাজ ঘোড়া এবং স্প্রিং

রাজা গ্লুকাসের ও রানী ইউরিনোমির পুত্র ছিলেন বেলেরোফোন, যিনি তার দুর্দান্ত সাহস, তেজ আর শারীরিক বৈশিষ্ঠের জন্য পরিচিত ছিলেন। বেলেরোফোন পেগাসাসের সাহায্য নিয়ে কিমিরাস আর আমাজনদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।

 

বেলেরোফোন পেগাসাসকে বশীভূত করা সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত যে অভিমত পাওয়া যায় তা হলো: পেগাসাসকে কেউ ধরতে পারছিলোনা, কিন্তু বেলেরোফোন করিন্থের জ্ঞানী ভবিষ্যদ্বক্তা পলিডাসের পরামর্শে দেবী অ্যাথেনা’র মন্দিরে গিয়ে নিদ্রা-যাপনের জন্য।

 

যেহেতু কথিত আছে অ্যাথেনা’র মন্দিরে নিদ্রা-যাপন করলে দেবী স্বপ্নে নিদ্রাচ্ছন্নের নিকট দেখা দেন ও তার মনোবাসনা পূর্ণ করতে সহায়তা করেন ফলে বেলেরোফোন তা-ই করলেন।

 

পর দিন ঘুম থেকে উঠে বেলেরোফোন দেখলেন স্বর্ণের তৈরী একটি লাগাম পড়ে আছে, তিনি এটি নিয়ে পেগাসাসের খোজে বের হলেন ও ইফারের বিখ্যাত ঝর্ণা পিরিনের সামনে পেগাসাসকে পানি পানরত পেয়ে এটি পরিয়ে বশীভূত করে এর পিঠে চড়ে বসলেন। আর এখান থেকেই ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস  ‘ এর নাম করন ।

 

 

আরব লীগের প্রত্যাখানের মুখে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে দখলভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ইউরোপে ইহুদী নিধনযজ্ঞ বা ‘শোয়া ‘র দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারে নি সেদেশের মানুষ৷ ফলে আরও একবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছোট্ট এই ইহুদী রাষ্ট্র৷

 

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা বিশ্বজুড়ে ভিআইপিদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

 

আমরা জানি, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পান বিভিন্ন দেশের রাজা, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। তাদের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা আর কেউ পান না।

 

বাড়ির চারদিকে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী, সঙ্গে প্রশিক্ষিত দেহরক্ষীসহ নানা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় সন্ত্রাসীদের হামলা এবং মনুষ্য গুপ্তচর ঠেকাতে।

 

কিন্তু এসব যেন এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে! কারণ পকেটেই যদি গুপ্তচর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় তাহলে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে কী হবে?

 

পকেটে গুপ্তচর ঢোকাতে একটা স্মার্ট ফোন, একটি মেসেজ এবং একটি ক্লিকই যথেষ্ট। নিজের ব্যক্তিগত অডিও, ভিডিও, ছবি সব পৌঁছে যাবে গুপ্তচর নেতাদের কাছে। গত সপ্তাহ থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই ডিজিটাল গুপ্তচর নিয়ে আলোচনা চলছে।

 

 

ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস নামের একটি সফটওয়্যার দিয়ে বিশ্বের অন্তত ৫০ হাজার ফোন নম্বর হ্যাক করা হয়েছে বলে একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

 

পকেটেই গুপ্তচর!

 

এই অনুসন্ধান নতুন একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে। তা হলো ইসরায়েলের সরকারই এনএসও গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠাতা নিভ, সালেভ এবং ওমরির নাম অনুসারেই গ্রুপের নাম। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা কোম্পানির ভেতরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কোম্পানির নীতিমালা স্টেট সিক্রেট (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা)।

 

তবে কোম্পানিকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হয় যাকে ‘গোল্ডেনরুল’ বলা হয়। তা হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েলে এটা ব্যবহার করা যায় না।

 

 

২০১১ সালে মেক্সিকো পেগাসাস স্পাইওয়্যার সর্বপ্রথম ক্রয় করে। এনএসও জানিয়েছে, ৪০টি দেশের ৬০টি সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রেতা। ইতিমধ্যে সফটওয়্যারটির অপব্যবহার হয়েছে কি না তা জানতে ইসরায়েল সরকার একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করেছে। যদিও এনএসও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড চালিত ফোনের ওপর গোপনে নজরদারি চালানোর ক্ষমতা এই ম্যালওয়্যারটির রয়েছে। পেগাসাস যদি কোনওভাবে ফোনের মধ্যে ঢুকতে পারে, তাহলে মালিকের অজান্তে ফোনকে ২৪ ঘণ্টার এক নজরদারির যন্ত্রে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে। ফোন থেকে মেসেজ বা ছবি পাঠালে কিংবা রিসিভ করলে পেগাসাস তা কপি করে গোপনে পাচার করে পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়।

 

 

এই স্পাইওয়্যারটি অগোচরে ফোনের কথাবার্তা রেকর্ড করা এবং ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে গোপনে মালিকের ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। ফোন ব্যবহারকারী কোথায় আছেন, কোথায় গিয়েছিলেন অথবা কার সঙ্গে দেখা করেছেন পেগাসাস সেই সম্পর্কেও জানতে পারে।

 

একটি টেক্সট ম্যাসেজ বা ই-মেইল পাঠানো হয় যাতে থাকে একটি লিংক। সেই লিংককে ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এটা ২০১৬ সালের তথ্য। এখন তো এনএসও গ্রুপ সফটওয়্যারের ক্ষমতাকে বহু গুণ শক্তিশালী করেছে।

 

এতে খরচ কত?

 

২০১৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, এনএসও গ্রুপ পেগাসাস সফটওয়্যারের মূল্য নিয়ে থাকে ৫ লাখ ডলার। আর মানুষের ফোন হ্যাক করতে আরও চার্জ নিয়ে থাকে। ওই সময় মোট সাড়ে ৬ লাখ ডলার নেওয়া হতো ১০টি আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন হ্যাক করতে। পাঁচটি ব্ল্যাকবেরি হ্যাক করতে নেওয়া হতো ৫ লাখ ডলার। অতিরিক্ত ১০০ ফোন টার্গেট করতে ৮ লাখ ডলার এবং ৫০ ফোন হ্যাক করতে ৫ লাখ ডলার দিতে হতো। এছাড়া বার্ষিক ব্যবস্থাপনা ফি হিসেবে এনএসও মোট মূল্যের ১৭ শতাংশ নিত। সৌদি আরবের সঙ্গেই এনএসও’র ৫৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল।

 

টার্গেটে যারা

 

ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের ল্য মঁদ, সাংবাদিকদের সংগঠন ফরবিডেন স্টোরিস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের প্রথমসারির ১৭টি মিডিয়ার যৌথ অনুসন্ধানে পেগাসাস নিয়ে ভয়ংকর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একটি স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে একজন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় এত বড় হস্তক্ষেপ হয়তো আর কারও দ্বারা সম্ভব নয়। অনুসন্ধানী কর্মসূচির নাম ছিল ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।

 

স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার ঢোকানো হয়েছে কিনা তা জানতে অ্যামনেস্টি ৬৭টি ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে। এর মাধ্যমে ৩৭টি পজিটিভ এসেছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়।

 

কয়েক মাস ধরে চালানো এই অনুসন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহার করা ৫০ হাজারেরও বেশি মোবাইল ফোন নম্বর পরীক্ষা করা হয়েছে। যে ১৪ জন রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধান পেগাসাসের টার্গেট হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে আছে তিন জন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট- ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিল রামাফোসা এবং ইরাকের বারহাম সালিহ।

 

 

১০ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তিন জন এখনও ক্ষমতায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, মিসরের মোস্তফা মাদব উলি এবং মরক্কোর সাদ-এদিন আলওথমানি। টার্গেট হয়েছেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহামেদ। ৩৪টি দেশের ৬০০ সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকের ফোন নম্বর রয়েছে। এছাড়া আরব রাজ পরিবারের সদস্য, ৬৪ কোম্পানি কর্মকর্তা, ১৮৯ সাংবাদিক এবং ৮৫ মানবাধিকার কর্মীও রয়েছেন।

 

 

 

পেগাসাস যেভাবে তথ্য ফাঁস করে

ইসরায়েলভিত্তিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘এনএসও গ্রুপ’ আলোচিত স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’-এর উদ্ভাবক। ধারণা করা হয়, ২০১৬ সাল থেকে পেগাসাস কখনো ‘কিউ সুইট’, কখনোবা ‘ট্রাইডেন্ট’ নামে ব্যবহার করা হয়েছে।

 

বর্তমান বিশ্বে অত্যাধুনিক স্পাইওয়্যার সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে পেগাসাসকে সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়। এটি সহজেই আইওএস, অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে অনুপ্রবেশ করতে পারে। খবর এনডিটিভির।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে পেগাসাস ব্যবহার করছে। ২০১৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে এই হ্যাকিং প্রযুক্তি বিক্রি শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোই ছিল এর প্রধান ক্রেতা।

 

সফটওয়্যারটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনুসন্ধান ও বৈশ্বিক অপরাধ প্রতিরোধের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে রক্ষায় সরকারি সংস্থাকে সহায়তার করে তারা।

 

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মানবাধিকারবিষয়ক নীতিতে বলা হয়েছে চুক্তি অনুযায়ী কিছু বাধ্যবাধকতা মেনে চলে তারা। এর মধ্যে রয়েছে আলোচিত সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ তদন্ত এবং প্রতিরোধ করা। নিজেদের পণ্যের মাধ্যমে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে তারা সতর্ক বলেও উল্লেখ করা হয়।

 

পেগাসাসের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের ঘটনা এটাই প্রথম নয়; ২০১৯ সালের শেষ দিকে ফেসবুকের মালিকানাধীন মেসেজিং সার্ভিস হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, ওই বছরের মে মাসে বিশ্বের ২০টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৪০০ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে পেগাসাস টার্গেট করে। এর মধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় সাংবাদিকও রয়েছেন বলে জানায় তারা।

 

 

রিসিভ না করলেও সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে

 

তথ্য ফাঁসের জন্য প্রথমে একটি ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে অন্য একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে ভিডিও কল দেয়। যখন কোনো সন্দেহহীন ব্যবহারকারীর ফোন বেজে ওঠে, তখন ওই নম্বরে একটি ক্ষতিকর কোড চলে গিয়ে স্পাইওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়। কেউ ফোন রিসিভ না করলেও সফটওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।

 

এরপর আক্রমণকারী ফোনের পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এটা এতটাই ভয়ংকর যে একবার স্পাইওয়্যারটি ইনস্টল হয়ে গেলে সহজেই যে–কারও হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজিং ও কথা বলা, ভয়েস কল, পাসওয়ার্ড, কন্টাক্ট তালিকা, বিভিন্ন ইভেন্টের ক্যালেন্ডার, ফোনের মাইক্রোফোন, এমনকি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে চলে যায়।

 

এত কিছুর পরও এনএসও গ্রুপ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে কাউকে ক্ষতি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। উল্টো দাবি করছে, তারা বৈধ ও পরীক্ষিতভাবে সরকারি সংস্থাগুলোয় সহায়তা করার জন্য তাদের কাছে সফটওয়্যার বিক্রি করছে।

 

 

"দ্য ইন্সিটিটিউট অফ ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস" মোসাদ

 

মোসাদ (হিব্রু ভাষায়: המוסד‎; আরবি: الموساد‎‎, al-Mōsād; ইতালিক অর্থ "দ্য ইন্সিটিটিউট"), শর্ট HaMossad leModiʿin uleTafkidim Meyuḥadim (হিব্রু ভাষায়: המוסד למודיעין ולתפקידים מיוחדים‎,

 

অর্থ "দ্য ইন্সিটিটিউট অফ ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস"; আরবি: الموساد للاستخبارات والمهام الخاصة‎‎ al-Mōsād lil-Istikhbārāt wal-Mahāmm al-Khāṣṣah) ১৯৪৯ সালে গঠিত ইসরাইলের প্রধান ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তথ্যসুত্র,উইকিপিডিয়া

 

এর কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়।এর নীতিমালা ও কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই৬ ও কানাডার সিএসআইএস এর অনুরূপ। মোসাদের হেডকোয়ার্টার তেলআবিবে।

 

ইসরাইলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলি যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা এবং দেশে-বিদেশে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধ করা, যেসব দেশে ইসরায়েলের অভিবাসন সংস্থা আইনত সক্রিয় হতে পারে না, সেই সব দেশ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করে ‘মোসাদ'।

 

নির্বাহী অফিস

ইসরায়েলি সামরিক ও অসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের বাছাই করা কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত মোসাদের মোট আটটি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ডিপার্টমেন্টের কিছু তথ্য জানা যায় :

 

কালেকশন ডিপার্টমেন্ট: এটি মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন এই বিভাগের এজেন্টরা।

 

 

পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লিয়াজোঁ ডিপার্টমেন্ট: এ গ্রুপের কাজ প্রতিটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা।

 

স্পেশাল অপারেশন ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপকে গুপ্তহত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়।

 

ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপ প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মনস্তাত্তি্বক যুদ্ধের জন্য প্রচার চালায় ও শত্রু শিবিরে ভুল খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে।

 

রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট: যাবতীয় গোয়েন্দা গবেষণা ও 'কাউন্টার ইনটেলিজেন্স'-এর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির নিরন্তর কাজ করে চলেন এই গ্রুপের গবেষকরা।

 

ইতিহাস

আরব লীগের প্রত্যাখানের মুখে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে দখলভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ইউরোপে ইহুদী নিধনযজ্ঞ বা ‘শোয়া ‘র দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারে নি সেদেশের মানুষ৷ ফলে আরও একবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর করতে যে কোন পদক্ষেপ নিতে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছোট্ট এই ইহুদী রাষ্ট্র৷

 

রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার ১৯ মাসের মাথায় দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন ‘মোসাদ' প্রতিষ্ঠা করেন। ডিসেম্বর ১৩, ১৯৪৯ সালে দ্য সেন্ট্রাল ইন্সিটিটিউট ফর করডিনেসন নামে মোসাদের কর্যক্রম শুরু হয় তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালের মার্চে।

 

 

ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগেই যেসব ইহুদি নিষিদ্ধ সংগঠন সংগ্রাম চালাচ্ছিল, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাকে ‘মোসাদ' এর পূর্বসূরি বলা হয়। মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয়। যওি অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের।

 

 

১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সংস্থাটার প্রধানের কথা

 

১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সংস্থাটার প্রধানের কথা। ১৯৯৬ সালে যখন সাবতাই কে অপসারন করে ডেনি ইয়াতমকে নিয়োগ দেওয়া হয় এক ঘোষণার মাধ্যমে, তখন প্রথমবারের মত বিশ্ববাসী জানতে পারে এই সংস্হাটার প্রধান কে।

 

 

১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে যখন নিকিটা ক্রুশ্চেভ এক গোপন মিটিংয়ে 'স্টালিনকে' অভিযুক্ত ও অস্বীকার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে, ঐ বক্তব্যের এক কপি মোসাদ সিআইএর হাতে দিয়ে দেয়।

 

 

এই প্রথম সিআইএ মোসাদের কার্যক্রম উপলব্ধি করে যাতে সিআইএ অভিভূত হয়। কারণ সিআইএর মত সংস্থাটিও এই রকম একটা স্পর্শকাতর সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছিল।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ